সুরমা জাহিদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট লেখিকা, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন নারীদের অধিকার ও সংগ্রাম নিয়ে তার লেখালেখির জন্য পরিচিত। তার লেখনীগুলো প্রধানত মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থা, বিশেষ করে বীরাঙ্গনাদের কষ্ট এবং সংগ্রাম নিয়ে। তিনি এমন একটি সময়ের সমাজের বীভৎস দিকগুলো চিত্রিত করেছেন, যেখানে নারীরা শুধু শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়নি, বরং তাদের সম্মান, সামাজিক পরিচিতি এবং মানবাধিকারের প্রতি অবহেলা করা হয়েছিল। সুরমা জাহিদ-এর বইগুলো সাধারণত নারীদের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের প্রতি হওয়া অত্যাচারের গল্প শোনায়। তার সৃষ্টির মধ্যে বীরঙ্গনা সমগ্র ১, বীরাঙ্গনা সমগ্র ২, বীরাঙ্গনা সমগ্র ৩, বীরাঙ্গনা সমগ্র ৪ একাধিক খণ্ডে বীরাঙ্গনাদের কাহিনী তুলে ধরে, যেখানে তারা না শুধুমাত্র তাদের শারীরিক নির্যাতন, বরং সামাজিক অবস্থা, মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ এবং পুনর্বাসনের পরিপ্রেক্ষিতেও কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং একটি প্রেমের গল্প, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, একাত্তরের বীরমাতাদের অজানা কথা, কিশোরীদের দেখা একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতি ইত্যাদি বইগুলোর মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থা এবং একাত্তরের বীষণ ভয়াবহতা সুনিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়া, এই সংগ্রামে আমিও আদিবাসী বীরাঙ্গনা, একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের ইতিহাস এবং বীর নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা এর মতো বইগুলোতে সুরমা জাহিদ আরো গভীরভাবে নারীদের বীরত্ব, তাদের সংগ্রাম, এবং একটি যুদ্ধের পর তাদের চিহ্নিত অসম্মানিত অবস্থাকে প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখনী শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন নারীদের কাহিনীই নয়, বরং যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে নারীদের পুনর্বাসন, তাদের নতুন অস্তিত্বের যাত্রার কথা এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে সহায়তা করেছে। সুরমা জাহিদ তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, তাদের সম্মান ও মর্যাদার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার পরে নারীদের জন্য একটি সমতা পূর্ণ সমাজ গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। সুরমা জাহিদ-এর কাজ বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নারীদের সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রেখেছে। লেখিকার জন্ম, মৃত্যুসাল এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি, তবে তার কাজের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং নারীদের সংগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশে একটি দীর্ঘ আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।