সুনীল জানা
সুনীল জানা (১৯৪০-২০১৯) বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম প্রভাবশালী লেখক, গল্পকার, নাট্যকার, এবং কবি ছিলেন। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা পাঠকদের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশব থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয়। তার সাহিত্যকর্ম প্রায় সব ক্ষেত্রেই মানবিক মূল্যবোধ, সমাজের বাস্তবতা এবং হাস্যরসের মিশ্রণে তৈরি। সুনীল জানা মূলত তার গল্পগুলির জন্য পরিচিত, তবে ছোটদের জন্য লেখা হাস্যরসাত্মক নাটক এবং কবিতা তার কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। তার প্রথম বই "শ্রেষ্ঠ গল্প" (সুনীল জানা) যা তার সাহিত্যকর্মের সূচনা, পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী লেখক হিসেবে তার পরিচিতি এনে দেয়। এছাড়া "রবিঠাকুর কবিঠাকুর" বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য নিয়ে তার মৌলিক বিশ্লেষণ প্রকাশ পায়, যা পাঠকদের কাছে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে। "ছোটদের হাসির নাটক" সুনীল জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি, যেখানে তিনি শিশুদের জন্য হাস্যরসাত্মক নাটক রচনা করেন, যা তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সফল হয়। তার আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল "ক্ষুদিরামের ফাঁসি", যেখানে তিনি ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় নিয়ে লেখেন, যা মুক্তির জন্য সংগ্রামকারী এক যুবকের কাহিনী বর্ণনা করে। এ বইয়ে তিনি সমাজের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্বলতাগুলি তুলে ধরেন। "একরাশ ভূত" তার ভূত-প্রেত সম্পর্কিত রচনাগুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে তিনি অশরীরী জগত এবং মানুষের মনোবিজ্ঞানের এক অভিনব মিশ্রণ তুলে ধরেন। সুনীল জানার সাহিত্যকর্ম প্রায় সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গভীর এবং সোজাসাপ্টা ছিল, তবে তার লেখায় এক ধরনের হাস্যরসও ছিল যা সঙ্গতিপূর্ণভাবে তার কাহিনীগুলিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলত। তার কাজের মধ্যে ছিল এক গভীর দৃষ্টি যা সমাজের অবিচার, অগঠনমূলক প্রথা এবং মানুষের চিরন্তন সংগ্রামকে তুলে ধরেছিল। তার সাহিত্যকর্ম শুধু সাধারণ পাঠকের কাছে নয়, সমালোচকদের কাছেও অত্যন্ত প্রশংসিত ছিল। সুনীল জানা ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার সাহিত্যের উত্তরাধিকার আজও বাংলা সাহিত্য জগতকে প্রভাবিত করে চলছে। তার রচনা এখনও পাঠকদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিশারী হিসেবে রয়েছে।