কৃষণ চন্দর
কৃষণ চন্দর একজন প্রখ্যাত ভারতীয় হিন্দি লেখক, যিনি তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্য সুপরিচিত। তিনি ১৯১৫ সালের ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের অবিভক্ত ভারতীয় অংশে জন্মগ্রহণ করেন। কৃষণ চন্দর সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর মনোযোগী ছিলেন, এবং তার লেখায় তিনি সাধারণ মানুষের জীবনের জটিলতা, দুঃখ-দুর্দশা, মানবিক সম্পর্ক, এবং সামাজিক অস্বীকৃতির বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর রচনাগুলো সমাজের নানান অসঙ্গতি, অত্যাচার, সংগ্রাম এবং মানুষের নৈতিকতা নিয়ে গভীর আলোচনার সৃষ্টি করেছে। কৃষণ চন্দরের বেশ কিছু বিখ্যাত রচনার মধ্যে "নগ্নছায়া", "দাঙ্গা ও সম্প্রীতির গল্প", "গাধা উপাখ্যান", "যব খেত জাগে", "উল্টো গাছ", "আমি গাধা বলছি", "ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ", "স্বপ্নের সৌরভ", "পূর্ণিমার রাতের প্রেম", "গাধার আত্মকথা", "নির্বাচিত গল্প", "চম্বল কী রাণী", "হংকং-এ একরাত", "গাদ্দার", "গাদ্দার", এবং "প্রকৃতি সমাজ প্রগতি : কৃষণ চন্দর" অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত রচনায় তিনি মানবিক অনুভূতির গভীরতা, প্রেমের সাদৃশ্য, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ধর্মীয় বৈষম্য এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। বিশেষত "গাধা উপাখ্যান" এবং "গাধার আত্মকথা" বই দুটি কৃষণ চন্দরের বুদ্ধিমত্তা এবং রসবোধের প্রতিফলন, যেখানে তিনি গাধার দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ ও মানবতা নিয়ে এক ধরনের ব্যঙ্গাত্মক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। "দাঙ্গা ও সম্প্রীতির গল্প" একটি চরম ধর্মীয় সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে, যা ভারতীয় উপমহাদেশে জাতীয় ঐক্য এবং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতি তার বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। কৃষণ চন্দর তার রচনায় সাম্য, প্রেম, প্রকৃতি এবং মানবাধিকারের বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। তিনি সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সমাজের অবিচার এবং অপ্রকাশিত সত্যকে প্রকাশ করেছেন, যা তার সময় এবং পরবর্তী প্রজন্মের পাঠকদের জন্য এক প্রেরণাদায়ক উপাদান হয়ে উঠেছে। কৃষণ চন্দর ১৯৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার সাহিত্য আজও ভারতীয় সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তার লেখা ভারতীয় সমাজের বহু সমস্যাকে সামনে এনে আমাদের চিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করেছে।