অজয় হোম (২ মে, ১৯১৩ — ৩০ অক্টোবর, ১৯৯২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি পক্ষীবিদ, প্রকৃতিবিদ, বিজ্ঞান লেখক এবং পরিবেশকর্মী। তার জীবনযাত্রা এবং কর্মজীবন বাংলা ও ভারতীয় পক্ষীবিদ্যার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। তার মূল অবদান ছিল পাখি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে গবেষণা, যা তাকে বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলে। অজয় হোমের শৈশব এবং কৈশোরকাল কেটেছে কলকাতায়, তবে তার প্রকৃতিপ্রেম ও পাখিপ্রীতি তাকে নানা অঞ্চলে গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং সুন্দরবন অঞ্চলের বন্যপ্রকৃতি ও পাখির ওপর বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। এই দীর্ঘ সময়কাল তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রায় অজস্র পাখির প্রজাতি, তাদের জীবনচক্র, খাদ্যাভ্যাস এবং প্রজনন কৌশল সম্পর্কে। তাঁর গবেষণায় পাখিদের জীবনধারা, তাদের বাসস্থান, খাদ্য শৃঙ্খলা, এবং পরিবেশগত সম্পর্কের বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে। অজয় হোমের গবেষণায় শুধু পাখি নয়, বরং তিনি বন্যপ্রাণী, অরণ্যপ্রকৃতি এবং স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবন এবং সমাজ সম্পর্কেও গভীর অনুসন্ধান করেছিলেন। তিনি বুঝতে চেয়েছিলেন যে প্রকৃতির সঠিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র প্রাণীজগতের জন্য নয়, বরং মানব সমাজের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি স্থানীয় উপজাতিদের জীবনযাত্রা, তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত জীবনধারারও বিশ্লেষণ করেছিলেন। অজয় হোম তার গবেষণার মাধ্যমে সারা ভারতবর্ষে এবং বিশেষভাবে বাংলায় পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়েছেন। তাঁর লেখায় পরিবেশের ক্ষতি, বনজ সম্পদ ধ্বংস এবং বনাঞ্চলের দুরাবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করেছিলেন এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও সুপারিশও প্রদান করেছেন। অজয় হোম শুধুমাত্র একজন পক্ষীবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, তিনি একজন সমাজ সচেতন লেখকও ছিলেন। তার প্রবন্ধ ও বইগুলি সাধারণ পাঠকদের জন্য নয়, বরং বিজ্ঞানী, গবেষক এবং পরিবেশবিদদের জন্যও অমূল্য রচনা হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছে। তার লেখা "পাখির বিশ্ব" এবং "সুন্দরবনের পাখি" তার অন্যতম জনপ্রিয় বই, যা আজও পাখিপ্রেমী এবং গবেষকদের কাছে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অজয় হোমের প্রখ্যাত অবদানগুলি আজও আমাদের মধ্যে জীবিত আছে, এবং তার গবেষণার মাধ্যমে বাঙালি পক্ষীবিদ্যাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তার অবদান পরিবেশবিজ্ঞানী এবং পক্ষীবিদদের কাছে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। (AI image)