শ্যামল চক্রবর্তী
শ্যামল চক্রবর্তী একজন বিশিষ্ট ভারতীয় লেখক, বিজ্ঞান লেখক, ও সমাজবিজ্ঞানী, যিনি বিজ্ঞান, সমাজ, দর্শন এবং ইতিহাস নিয়ে গভীর গবেষণা করেছেন। তিনি ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর সাহিত্যকর্মে যুক্তি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং সমাজের নানান দিক তুলে ধরার জন্য সুপরিচিত। শ্যামল চক্রবর্তী মূলত বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং তার লেখা বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করে তুলে ধরেছে। তার লেখায় তিনি বিজ্ঞান, দর্শন এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত শিক্ষামূলক এবং চিন্তনীয়। শ্যামল চক্রবর্তীর রচনা সমূহের মধ্যে অন্যতম বই “স্টিফেন হকিং: অ্যা বায়োগ্রাফি”। এই বইটি বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের জীবন ও কাজের ওপর লেখা একটি বিস্তৃত বায়োগ্রাফি। এখানে শ্যামল চক্রবর্তী স্টিফেন হকিংয়ের অসাধারণ জীবনের সংগ্রাম, তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মহাবিশ্বের প্রতি তার অসীম আগ্রহের কথা তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে তিনি পাঠকদের মহাবিশ্ব, কাল ও স্থান সম্পর্কে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছেন। “একুশ শতক ও বিজ্ঞানের সংকট” বইটি একুশ শতকের বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও সংকটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। শ্যামল চক্রবর্তী এখানে বিজ্ঞানের উন্নতির পাশাপাশি সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কিছু সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেছেন। একইভাবে, “ভারতীয় সমাজের বিকাশধারা” বইয়ে ভারতীয় সমাজের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ও এর বিকাশের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে তিনি সমাজবিজ্ঞানের গভীর ধারণা প্রদান করেছেন। “আইনস্টাইনের গোয়েন্দা ফাইল এবং অন্যান্য প্রবন্ধ” বইটি শ্যামল চক্রবর্তীর একাধিক প্রবন্ধের সংকলন, যেখানে তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্ব ও কাজের পাশাপাশি বিজ্ঞান, যুক্তি, ধর্ম ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। “পরমাণু মহাভারত” বইটি আধুনিক পরমাণু বিজ্ঞান এবং তার ইতিহাসের সাথে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করে। “ভাটি গাঙ বাইয়া শচীন কর্তার জীবন ও গান” বইটি শচীন কর্তার জীবনী ও তাঁর গানের ওপর ভিত্তি করে রচিত, যেখানে ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যতম মহান পুরুষের জীবন এবং সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। “কাশ্মীর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত” বইটি কাশ্মীরের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে লেখা, যেখানে শ্যামল চক্রবর্তী কাশ্মীরের অতীতের ঘটনাবলী এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করেছেন। “অ্যারিস্টটল থেকে স্টিফেন হকিং” বইয়ে তিনি পশ্চিমী দর্শনের ইতিহাস এবং এর বৈজ্ঞানিক দিক সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। “রবি ঠাকুরের ডাক্তারি” বইটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক চিন্তা নিয়ে আলোচনা করেছে। শ্যামল চক্রবর্তীর আরও কিছু উল্লেখযোগ্য বই হলো “বিজ্ঞান ও কুসংস্কার”, “অপরাজেয় স্টিফেন হকিং”, “ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র”, “সময় অসময় ও বিজ্ঞান”, “যে কাজ বিজ্ঞানীদের মানায় না”, “বিজ্ঞান অন্তরের ভাষা”, “বিজ্ঞানের তিন ভুবন”, “বিজ্ঞানের ডাকঘর”, “বড়ো মানুষদের চোখে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র”, “বিজ্ঞান যুক্তি ধর্ম সমাজ”, “বিজ্ঞানের চরৈবেতি গান”, এবং “অপরাজিত বিজ্ঞানীরা”। এসব বই শ্যামল চক্রবর্তীর সাহিত্যিক দক্ষতা ও বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর গভীর চিন্তা এবং বিশ্লেষণকে প্রকাশ করে। শ্যামল চক্রবর্তীর লেখাগুলো শুধুমাত্র বিজ্ঞানী, গবেষক বা ছাত্রদের জন্য নয়, বরং সাধারণ পাঠকদের জন্যও অত্যন্ত পাঠযোগ্য। তার সাহিত্যকর্ম আজও পাঠকদের মাঝে আলোচনার উদ্রেক করে এবং বিজ্ঞান ও সমাজের বিভিন্ন দিকের উপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।