চোখের বালি
চোখের বালি (১৯০৩) উপন্যাস নৌকাডুবির পূর্ববর্তী হইলেও, রবীন্দ্রনাথ ইহাতে নৌকা-ডুবি অপেক্ষা অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছেন। এখানে ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্র-বিশ্লেষণে লেখক অনন্যপূর্ব গভীরতা ও কৌশল দেখাইয়াছেন। নৌকাডুবির সরল-সহজ, একটানা প্রবাহের সহিত তুলনায় এখানে পদে পদে সংঘাত ও গভীর ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্ট হইয়াছে। আকস্মিকতার স্থানে সুদৃঢ়, অচ্ছেদ্য কার্যকারণ-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেÑসমস্ত পরিবর্তনের স্রোত চরিত্রগত গভীর উৎস হইতেই প্রবাহিত হইয়াছে। মহেন্দ্র, বিনোদিনী, বিহারী ও আশাÑএই চারিজনে মিলিয়া তাহাদের চারিদিকে যে প্রবল ঘূর্ণিবায়ুর সৃষ্টি করিয়াছে তাহার মধ্যে প্রত্যেকেরই চরিত্রগত বিশেষত্ব একটি বিশেষ রকমের গতিবেগ আনিয়া দিয়াছে। ইহাদের পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধটি অত্যন্ত বিচিত্র ও জটিল এবং সেই সমস্ত অবস্থার ব্যাপক পর্যালোচনা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। মহেন্দ্র ও বিনোদিনী গূঢ় আকর্ষণ-বিকর্ষণ-লীলাই এই ঘূর্নিবায়ুর কেন্দ্রস্থ শক্তি; কিন্তু ইহার মধ্যে বিহারী ও আশাও তাহাদের সবল ও দুর্বল প্রতিক্রিয়ার দ্বারা নূতন জটিলতার সঞ্চার করিয়াছে। বিহারীর সবল, একনিষ্ঠ চিত্ত বিনোদিনীকে আকর্ষণ করিয়াছে; এবং তাহার অবজ্ঞাসূচক, কঠোর প্রত্যাখ্যান এই আকর্ষণকে অনিবার্য বেগ ও ব্যাকুলতামণ্ডিত করিয়া তুলিয়াছে। আবার বিহারীর মনের নিভৃততম কোণে আশার প্রতি যে গোপন অনুরাগের বীজ লুক্কায়িত ছিল তাহাই বিনোদিনীর ঈর্ষ্যাগ্নিতে নূতন ইন্ধন দিয়া তাহাকে আশা ও মহেন্দ্রের সর্বনাশ-সাধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করিয়াছে। আশার সরল বিশ্বাস ও স্বভাবসিদ্ধ শিথিলতা মহেন্দ্র-বিনোদিনীকে অবসর ও সুযোগ প্রদান করিয়া বিপদকে ঘনীভূত করিয়াছে; এবং বিহারীর প্রতি তাহার বিবেচনাহীন, প্রবল বিরাগ বিহারীকে কর্মক্ষেত্র হইতে অপসৃত করিয়া মহেন্দ্র-বিনোদিনীর প্রেমাভিনয়কে একেবারে বাধামুক্ত করিয়া দিয়াছে। আশার প্রতি বিহারীর প্রেম মহেন্দ্রের উপর তাহার নৈতিক প্রভাব ক্ষুণ্ণ করিয়াছে ও বিহারীর কল্যাণকামী মধ্যস্থতাকে প্রকাশ্যভাবে উপেক্ষা করিতে মহেন্দ্রকে উত্তেজিত করিয়াছে। এইরূপে এই চারিজনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলি খুব সূক্ষ্ম ও জটিল শৃঙ্খলে গ্রথিত হইয়া একটি চমৎকার ঐক্য ও সমন্বয় লাভ করিয়াছে।
চোখের বালি (১৯০৩) উপন্যাস নৌকাডুবির পূর্ববর্তী হইলেও, রবীন্দ্রনাথ ইহাতে নৌকা-ডুবি অপেক্ষা অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছেন। এখানে ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্র-বিশ্লেষণে লেখক অনন্যপূর্ব গভীরতা ও কৌশল দেখাইয়াছেন। নৌকাডুবির সরল-সহজ, একটানা প্রবাহের সহিত তুলনায় এখানে পদে পদে সংঘাত ও গভীর ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্ট হইয়াছে। আকস্মিকতার স্থানে সুদৃঢ়, অচ্ছেদ্য কার্যকারণ-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেÑসমস্ত পরিবর্তনের স্রোত চরিত্রগত গভীর উৎস হইতেই প্রবাহিত হইয়াছে। মহেন্দ্র, বিনোদিনী, বিহারী ও আশাÑএই চারিজনে মিলিয়া তাহাদের চারিদিকে যে প্রবল ঘূর্ণিবায়ুর সৃষ্টি করিয়াছে তাহার মধ্যে প্রত্যেকেরই চরিত্রগত বিশেষত্ব একটি বিশেষ রকমের গতিবেগ আনিয়া দিয়াছে। ইহাদের পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধটি অত্যন্ত বিচিত্র ও জটিল এবং সেই সমস্ত অবস্থার ব্যাপক পর্যালোচনা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। মহেন্দ্র ও বিনোদিনী গূঢ় আকর্ষণ-বিকর্ষণ-লীলাই এই ঘূর্নিবায়ুর কেন্দ্রস্থ শক্তি; কিন্তু ইহার মধ্যে বিহারী ও আশাও তাহাদের সবল ও দুর্বল প্রতিক্রিয়ার দ্বারা নূতন জটিলতার সঞ্চার করিয়াছে। বিহারীর সবল, একনিষ্ঠ চিত্ত বিনোদিনীকে আকর্ষণ করিয়াছে; এবং তাহার অবজ্ঞাসূচক, কঠোর প্রত্যাখ্যান এই আকর্ষণকে অনিবার্য বেগ ও ব্যাকুলতামণ্ডিত করিয়া তুলিয়াছে। আবার বিহারীর মনের নিভৃততম কোণে আশার প্রতি যে গোপন অনুরাগের বীজ লুক্কায়িত ছিল তাহাই বিনোদিনীর ঈর্ষ্যাগ্নিতে নূতন ইন্ধন দিয়া তাহাকে আশা ও মহেন্দ্রের সর্বনাশ-সাধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করিয়াছে। আশার সরল বিশ্বাস ও স্বভাবসিদ্ধ শিথিলতা মহেন্দ্র-বিনোদিনীকে অবসর ও সুযোগ প্রদান করিয়া বিপদকে ঘনীভূত করিয়াছে; এবং বিহারীর প্রতি তাহার বিবেচনাহীন, প্রবল বিরাগ বিহারীকে কর্মক্ষেত্র হইতে অপসৃত করিয়া মহেন্দ্র-বিনোদিনীর প্রেমাভিনয়কে একেবারে বাধামুক্ত করিয়া দিয়াছে। আশার প্রতি বিহারীর প্রেম মহেন্দ্রের উপর তাহার নৈতিক প্রভাব ক্ষুণ্ণ করিয়াছে ও বিহারীর কল্যাণকামী মধ্যস্থতাকে প্রকাশ্যভাবে উপেক্ষা করিতে মহেন্দ্রকে উত্তেজিত করিয়াছে। এইরূপে এই চারিজনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলি খুব সূক্ষ্ম ও জটিল শৃঙ্খলে গ্রথিত হইয়া একটি চমৎকার ঐক্য ও সমন্বয় লাভ করিয়াছে।
Writer |
|
Publisher |
|
ISBN |
9789849799153 |
Language |
Bengali / বাংলা |
Country |
Bangladesh |
Format |
Hardcover |
First Published |
January 2025 |
Pages |
240 |