আমি বিজয় দেখেছি
প্রথম পুরুষে লেখা আত্মস্মৃতি বা তৃতীয় পুরুষে লেখা ব্যক্তির জীবনীও সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। এমন নজির মোটেও বিরল নয়। এম আর আখতার মুকুলের লেখা আমি বিজয় দেখেছি এমন এক গোত্রভুক্ত রচনা-কর্ম, যাকে সহজে না বলা যাবে আত্মকথা, না বলা যাবে নিরেট ইতিহাস-কথন। বইয়ের ভূমিকায়ই এর সাক্ষ্য মেলে, যেখানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘একটি ধরনের আত্মকাহিনী যদি উপন্যাসের কাছাকাছি হয়ে থাকে, তাহলে আরেক ধরনের আত্মকথাকে বলতে হয় ইতিহাসের সগোত্র। এ-জাতীয় রচনায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের কাহিনী যতটা স্থান পায়, তার চেয়ে বেশি রূপ পায় একটা দেশ ও কালের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য। যাঁরা এ দিকটায় জোর দেন, তাঁরা একটা বিশেষ সময় ও এলাকাকে ঘিরে স্মৃতিকথা রচনায় মনোনিবেশ করেন।’ ‘“আমি বিজয় দেখেছি” মূলতঃ এ-জাতীয় গ্রন্থ।’ এ বইকে সরাসরি লেখকের আস্ত আত্মজীবনী বলা না গেলেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত তাঁর জীবনকথা বলে অভিহিত করা যাবে নিঃসন্দেহে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গ্রন্থকার কেবল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মারফত সম্প্রচারিত বহুল জনপ্রিয় ‘চরমপত্র’-র লেখক ও পাঠক ছিলেন না, ছিলেন উল্লিখিত প্রচারমাধ্যমটির অন্যতম মূল সংগঠকও। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ও প্রশাসনিক তৎপরতাকে একেবারে অন্দরমহল থেকে চাক্ষুষ করার এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে গৃহীত সাংগঠনিক উদ্যোগ ইত্যাদিকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ফলে এই গ্রন্থে যেমন প্রামাণ্য ঘটনার সমাহার ঘটেছে, তেমনি থেকে থেকেই তিনি স্মৃতিচারণার সূত্রে প্রসঙ্গত ফিরে গিয়েছেন দূর ও অনতি-অতীতে। এতে অন্তর্ভুক্ত ঘটনার কালগত সীমা আক্ষরিক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের মাত্র নয় মাস অর্থাৎ ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর হলেও এর ফ্ল্যাশব্যাকের সীমা আরও বিস্তৃত—ব্রিটিশ শাসনামল, সন্ত্রাসবাদী সংগ্রাম, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন, তেতাল্লিশের মহাদুর্ভিক্ষ, ছেচল্লিশের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, সাতচল্লিশের ভারত উপমহাদেশের বিভক্তি, আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি, পাকিস্তানের পূর্ব অংশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে পাঞ্জাবি শাসক-শোষকদের নানা অমানবিক নিপীড়ন-নির্যাতন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি, যুক্তফ্রন্টের বিজয়, যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন, আটান্ন সালে লৌহমানব আইউব খানের সামরিক শাসন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু, এরই পথ ধরে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা, অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা, একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত, ২৬ মার্চ বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের মতো প্রসঙ্গ যেমন এসেছে, তেমনি নিজের একান্ত প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন এম আর আখতার মুকুল। এ গ্রন্থে লেখক নিজেকে নিয়ে কখনো কখনো পরিহাসও করেছেন। যেমন—এক জায়গায় জানাচ্ছেন, আইউব খান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর যে তিনি পাকিস্তান বেতারে পাকিস্তানের গুণগান করে কথিকা পাঠ করেছিলেন, সেই তিনি আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘চরমপত্র’ পাঠ করছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। স্মৃতিসূত্রে মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাপ্ত ইতিহাস রচনা করেন এম আর আখতার মুকুল, তাকে তুচ্ছমূল্য করার অবকাশ নেই।
প্রথম পুরুষে লেখা আত্মস্মৃতি বা তৃতীয় পুরুষে লেখা ব্যক্তির জীবনীও সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। এমন নজির মোটেও বিরল নয়। এম আর আখতার মুকুলের লেখা আমি বিজয় দেখেছি এমন এক গোত্রভুক্ত রচনা-কর্ম, যাকে সহজে না বলা যাবে আত্মকথা, না বলা যাবে নিরেট ইতিহাস-কথন। বইয়ের ভূমিকায়ই এর সাক্ষ্য মেলে, যেখানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘একটি ধরনের আত্মকাহিনী যদি উপন্যাসের কাছাকাছি হয়ে থাকে, তাহলে আরেক ধরনের আত্মকথাকে বলতে হয় ইতিহাসের সগোত্র। এ-জাতীয় রচনায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের কাহিনী যতটা স্থান পায়, তার চেয়ে বেশি রূপ পায় একটা দেশ ও কালের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য। যাঁরা এ দিকটায় জোর দেন, তাঁরা একটা বিশেষ সময় ও এলাকাকে ঘিরে স্মৃতিকথা রচনায় মনোনিবেশ করেন।’ ‘“আমি বিজয় দেখেছি” মূলতঃ এ-জাতীয় গ্রন্থ।’ এ বইকে সরাসরি লেখকের আস্ত আত্মজীবনী বলা না গেলেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত তাঁর জীবনকথা বলে অভিহিত করা যাবে নিঃসন্দেহে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গ্রন্থকার কেবল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মারফত সম্প্রচারিত বহুল জনপ্রিয় ‘চরমপত্র’-র লেখক ও পাঠক ছিলেন না, ছিলেন উল্লিখিত প্রচারমাধ্যমটির অন্যতম মূল সংগঠকও। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ও প্রশাসনিক তৎপরতাকে একেবারে অন্দরমহল থেকে চাক্ষুষ করার এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে গৃহীত সাংগঠনিক উদ্যোগ ইত্যাদিকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ফলে এই গ্রন্থে যেমন প্রামাণ্য ঘটনার সমাহার ঘটেছে, তেমনি থেকে থেকেই তিনি স্মৃতিচারণার সূত্রে প্রসঙ্গত ফিরে গিয়েছেন দূর ও অনতি-অতীতে। এতে অন্তর্ভুক্ত ঘটনার কালগত সীমা আক্ষরিক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের মাত্র নয় মাস অর্থাৎ ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর হলেও এর ফ্ল্যাশব্যাকের সীমা আরও বিস্তৃত—ব্রিটিশ শাসনামল, সন্ত্রাসবাদী সংগ্রাম, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন, তেতাল্লিশের মহাদুর্ভিক্ষ, ছেচল্লিশের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, সাতচল্লিশের ভারত উপমহাদেশের বিভক্তি, আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি, পাকিস্তানের পূর্ব অংশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে পাঞ্জাবি শাসক-শোষকদের নানা অমানবিক নিপীড়ন-নির্যাতন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি, যুক্তফ্রন্টের বিজয়, যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন, আটান্ন সালে লৌহমানব আইউব খানের সামরিক শাসন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু, এরই পথ ধরে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা, অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা, একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত, ২৬ মার্চ বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের মতো প্রসঙ্গ যেমন এসেছে, তেমনি নিজের একান্ত প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন এম আর আখতার মুকুল। এ গ্রন্থে লেখক নিজেকে নিয়ে কখনো কখনো পরিহাসও করেছেন। যেমন—এক জায়গায় জানাচ্ছেন, আইউব খান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর যে তিনি পাকিস্তান বেতারে পাকিস্তানের গুণগান করে কথিকা পাঠ করেছিলেন, সেই তিনি আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘চরমপত্র’ পাঠ করছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। স্মৃতিসূত্রে মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাপ্ত ইতিহাস রচনা করেন এম আর আখতার মুকুল, তাকে তুচ্ছমূল্য করার অবকাশ নেই।
| 
                                                     Writer  | 
                                                |
| 
                                                     Publisher  | 
                                                |
| 
                                                 ISBN  | 
                                            
                                                 9789844326170  | 
                                        
| 
                                                 Language  | 
                                            
                                                 Bengali / বাংলা  | 
                                        
| 
                                                 Country  | 
                                            
                                                 Bangladesh  | 
                                        
| 
                                                 Format  | 
                                            
                                                 Hardcover  | 
                                        
| 
                                                 Pages  | 
                                            
                                                 384  | 
                                        
