স্বাধীনতাত্তোর চট্টগ্রামের চার শিল্পী
চিত্রকলা সম্ভবত নীরবতার শিল্পভাষার মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী মাধ্যম। রঙ-এর বর্ণমালাও যে আবেগ এবং যুক্তির আধারে বাস্তব, সত্য ও সুন্দরের ভাষ্যকার হয়ে উঠতে পারে সেটা পৃথিবীর অপরিমেয় শিল্পসম্ভারকে সাক্ষী মেনে বলা যেতে পারে। কিন্তু যাঁরা শিল্পের কাণ্ডারী, যাঁরা রঙ এবং রেখার কুশলী প্রকাশের দ্বারা এক আশ্চর্য দুনিয়া গড়ে তোলেন তাঁদের সেই জগতের খুঁটিনাটি বা তার বিষয় ও পটভূমি সম্পর্কে তাঁরা নিজেরা ততটা সরব হ'ন না। ফলে তাঁদের ভাষাকে উপলব্ধি করবার জন্যে, তাঁদের দৃষ্টির আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্যে প্রয়োজন পড়ে ভাষ্যকারের।
সুফিয়া বেগম রচিত স্বাধীনতাত্তোর চট্টগ্রামের চার শিল্পী গ্রন্থটি সেরকমই এক অভিপ্রয়াস। যে-চারজন শিল্পীর জীবন ও শিল্পকর্মকে নির্ভর করে তাঁর এ গ্রন্থ তাঁরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের চিত্রকলায় বিশেষ স্থানের অধিকারী। গ্রন্থনামের সূত্রে একটি ভৌগোলিক পরিকাঠামোর নর্দেশনা চোখে পড়া স্বাভাবিক। আসলে কর্ম-পেশা কিংবা জীবনের অনিবার্য প্রয়োজনে উপর্যুক্ত চার শিল্পী হয়তো বা চট্টগ্রামে বসবাস করেছিলেন এবং এখনও করছেন। এঁদের কেউ কেউ কিন্তু তাঁরা বৃহত্তর বাংলাদেশেরই বাসিন্দা। আর শিল্পীর সত্যিকার অর্থে থাকে না কোনও নির্দিষ্ট এলাকা, তিনি জীবন ও সমাজেরই প্রতিনিধি।
বহুকাল আগে ফরাসি ঔপন্যাসিক এবং মননশিল্পী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ভয়েসেস অব সাইলেন্স-এর মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছিলেন। চিত্রকলা, ভাস্কর্য কিংবা সামগ্রিক অর্থে শিল্প এক শক্তিমান প্রকাশক হয়ে সমকাল ও চিরকালের বার্তা বয়ে আনে। ফরাসি কবি বোদল্যার তাঁর অসাধারণ শিল্পালোচনাগুলোর মধ্য দিয়ে দেলাক্রোয়া কিংবা এডওয়ার্ড মানে'র জগতটাকেই যে উপস্থাপন করেছিলেন তা-ই নয়, সমকালীন মানুষ যখন শিল্পীর শিল্পকর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিল, শিল্পীকে দাঁড় করিয়েছিল কাঠগড়ায় তখন বোদল্যার তাঁর শিল্পসমাে লাচনার বিশ্লেষণ দিয়ে বলেছিলেন, মানুষ যে-সত্য দেখে তা সাদাম টা আর যে-সত্য শিল্পের আড়ালে বা নেপথ্যে থেকে যায় সেটি গভীর ও গভীরতর ব্যঞ্জনাবাহী। বোদল্যারের সেই বক্তব্য কাজেই শিল্পীর শিল্পকর্মের বিশ্লেষণ-মূল্যায়নে এক ধরনের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। সুফিয়া বেগমের চিত্রগ্রন্থটি শিল্পীদের শিল্পের অনুপম জগতটিকে বুঝবার জন্যে তেমনই অবলম্বন হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে। হাসি চক্রবর্তী, মনসুর উল করিম, নাজলী লায়লা মনসুর এবং কে এম এ কাইয়ূম-চার শিল্পীর শিল্পসমালোচনার ক্ষেত্রে রচয়িতা তাঁর নৈর্ব্যক্তিকতাকে বজায় রাখবার প্রচেষ্টায় সফল হয়েছেন।
সুফিয়া বেগম তাঁর গ্রন্থটিতে একদিকে বাংলাদেশের এবং চট্টগ্রামের চিত্রশিল্পের বিকাশ ও বিবর্তনের রেখাটিকে সঙ্গে রেখেছেন, অন্যদিকে কালের অনুক্রমে আলোচ্য শিল্পী-চতুষ্টয়ের জীবন, জগত ও দর্শনের রূপকে ব্যাখ্যা করেছেন। ইতোপূর্বে রশিদ চৌধুরী সম্পর্কে তাঁর গবেষণা কর্মটির সূত্রে আমরা সুফিয়া'র শিল্প-সমালোচনার অবস্থানটিকে প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমান গ্রন্থ তাঁর সেই অবস্থানকে আরও মজবুত করবে এমন আশা করাই যায়। চিত্রশিল্পী ও তাঁদের বিচিত্র ভুবনের বিশ্লেষণে সুফিয়া বেগমের অধ্যবসায় নিরন্তর অব্যাহত থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশিত।
মহীবুল আজিজ
ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ এবং অধ্যাপক বাংলাবিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চিত্রকলা সম্ভবত নীরবতার শিল্পভাষার মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী মাধ্যম। রঙ-এর বর্ণমালাও যে আবেগ এবং যুক্তির আধারে বাস্তব, সত্য ও সুন্দরের ভাষ্যকার হয়ে উঠতে পারে সেটা পৃথিবীর অপরিমেয় শিল্পসম্ভারকে সাক্ষী মেনে বলা যেতে পারে। কিন্তু যাঁরা শিল্পের কাণ্ডারী, যাঁরা রঙ এবং রেখার কুশলী প্রকাশের দ্বারা এক আশ্চর্য দুনিয়া গড়ে তোলেন তাঁদের সেই জগতের খুঁটিনাটি বা তার বিষয় ও পটভূমি সম্পর্কে তাঁরা নিজেরা ততটা সরব হ'ন না। ফলে তাঁদের ভাষাকে উপলব্ধি করবার জন্যে, তাঁদের দৃষ্টির আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্যে প্রয়োজন পড়ে ভাষ্যকারের। সুফিয়া বেগম রচিত স্বাধীনতাত্তোর চট্টগ্রামের চার শিল্পী গ্রন্থটি সেরকমই এক অভিপ্রয়াস। যে-চারজন শিল্পীর জীবন ও শিল্পকর্মকে নির্ভর করে তাঁর এ গ্রন্থ তাঁরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের চিত্রকলায় বিশেষ স্থানের অধিকারী। গ্রন্থনামের সূত্রে একটি ভৌগোলিক পরিকাঠামোর নর্দেশনা চোখে পড়া স্বাভাবিক। আসলে কর্ম-পেশা কিংবা জীবনের অনিবার্য প্রয়োজনে উপর্যুক্ত চার শিল্পী হয়তো বা চট্টগ্রামে বসবাস করেছিলেন এবং এখনও করছেন। এঁদের কেউ কেউ কিন্তু তাঁরা বৃহত্তর বাংলাদেশেরই বাসিন্দা। আর শিল্পীর সত্যিকার অর্থে থাকে না কোনও নির্দিষ্ট এলাকা, তিনি জীবন ও সমাজেরই প্রতিনিধি। বহুকাল আগে ফরাসি ঔপন্যাসিক এবং মননশিল্পী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ভয়েসেস অব সাইলেন্স-এর মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছিলেন। চিত্রকলা, ভাস্কর্য কিংবা সামগ্রিক অর্থে শিল্প এক শক্তিমান প্রকাশক হয়ে সমকাল ও চিরকালের বার্তা বয়ে আনে। ফরাসি কবি বোদল্যার তাঁর অসাধারণ শিল্পালোচনাগুলোর মধ্য দিয়ে দেলাক্রোয়া কিংবা এডওয়ার্ড মানে'র জগতটাকেই যে উপস্থাপন করেছিলেন তা-ই নয়, সমকালীন মানুষ যখন শিল্পীর শিল্পকর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিল, শিল্পীকে দাঁড় করিয়েছিল কাঠগড়ায় তখন বোদল্যার তাঁর শিল্পসমাে লাচনার বিশ্লেষণ দিয়ে বলেছিলেন, মানুষ যে-সত্য দেখে তা সাদাম টা আর যে-সত্য শিল্পের আড়ালে বা নেপথ্যে থেকে যায় সেটি গভীর ও গভীরতর ব্যঞ্জনাবাহী। বোদল্যারের সেই বক্তব্য কাজেই শিল্পীর শিল্পকর্মের বিশ্লেষণ-মূল্যায়নে এক ধরনের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। সুফিয়া বেগমের চিত্রগ্রন্থটি শিল্পীদের শিল্পের অনুপম জগতটিকে বুঝবার জন্যে তেমনই অবলম্বন হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে। হাসি চক্রবর্তী, মনসুর উল করিম, নাজলী লায়লা মনসুর এবং কে এম এ কাইয়ূম-চার শিল্পীর শিল্পসমালোচনার ক্ষেত্রে রচয়িতা তাঁর নৈর্ব্যক্তিকতাকে বজায় রাখবার প্রচেষ্টায় সফল হয়েছেন। সুফিয়া বেগম তাঁর গ্রন্থটিতে একদিকে বাংলাদেশের এবং চট্টগ্রামের চিত্রশিল্পের বিকাশ ও বিবর্তনের রেখাটিকে সঙ্গে রেখেছেন, অন্যদিকে কালের অনুক্রমে আলোচ্য শিল্পী-চতুষ্টয়ের জীবন, জগত ও দর্শনের রূপকে ব্যাখ্যা করেছেন। ইতোপূর্বে রশিদ চৌধুরী সম্পর্কে তাঁর গবেষণা কর্মটির সূত্রে আমরা সুফিয়া'র শিল্প-সমালোচনার অবস্থানটিকে প্রত্যক্ষ করেছি। বর্তমান গ্রন্থ তাঁর সেই অবস্থানকে আরও মজবুত করবে এমন আশা করাই যায়। চিত্রশিল্পী ও তাঁদের বিচিত্র ভুবনের বিশ্লেষণে সুফিয়া বেগমের অধ্যবসায় নিরন্তর অব্যাহত থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশিত। মহীবুল আজিজ ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ এবং অধ্যাপক বাংলাবিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
Writer |
|
Publisher |
|
ISBN |
9789843511959 |
Language |
Bengali / বাংলা |
Country |
Bangladesh |
Format |
Hardcover |
Pages |
93 |