বিশ্বসাহিত্য ভাষণ-১ : মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি
“এ বইটি লিখতে চাই নি, কিন্তু লিখতে হয়েছে। যেতে হয়েছে বিপুল শ্রমের ভেতর দিয়ে। যোগাড় করতে হয়েছে শতো শতো বই। পড়তে হয়েছে নানা আজেবাজে পৃষ্ঠা। কাজটা উপভোগ করি নি। বিরক্ত হয়েছি ঢের, কিন্তু সহ্য করেছি, কারণ বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দারিদ্র্য এভারেস্টের চেয়ে উঁচু। বাংলা ভাষায় রুমিসাহিত্যের নির্মোহ বিশ্লেষণ নেই বললেই চলে। যা আছে, তা গরিব ভক্তমণ্ডলীর হামদ-নাত, স্তুতিকিতাব, ও সেজদা। কিচ্ছারুমির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে আসল রুমি। তৈরি হয়েছে রূপকথার জঙ্গল। ঘটানো হয়েছে সুপারহিউম্যানাইজেশন। পছন্দের লোককে অতিমানব ও অপছন্দের লোককে অতিশয়তান করা মানুষজাতির পুরাতন রোগ। রুমিসাহিত্য এ রোগের প্রসিদ্ধ শিকার। বর্ণরোগী যেমন বস্তুর আসল রঙ দেখতে পায় না, রুমিভক্তরাও তেমনি রুমির মানব রূপ স্বীকার করতে চায় না। ‘নবী রুমি’-র খোলস ভেঙে ‘মানুষ রুমী’ বের করে আনাই বইটির বড় লক্ষ্য।
রুমিকে ঘিরে একটি অক্ষ তৈরি হয়েছে। অ্যাক্সিস অভ সুফি লিটারেচার। ফলে অনিবার্যভাবে, ভাষণে ফরিদুদ্দিন আত্তার, সানাই গজনভী, শামস তাবরিজি, হাফিজ, সাদি, হাল্লাজ, বায়েজিদ, তাঁদের প্রসঙ্গ এসেছে। সুফিবাদের উৎস ও প্রাচীন ধোঁয়াশাবাদের সাথে এর সম্পর্ক, অন্য ধর্মগুলোর সাথে কোলাকুলি, এ বিষয়গুলোও এসেছে। ‘অশালীন’ জিনিসপত্রও আলোচনা করতে হয়েছে, এড়ানো যায় নি (যেমন— সুফিদের যৌনজীবন ও রুমিযুগের সমকামিতা)।
ভাষণটির বহু বাক্য পাঠককে বিব্রত করবে। অনেকে হোঁচট খাবে, ভাববে, মনে হয় মহিউদ্দিন মোহাম্মদ বানিয়ে বলেছেন। এ কারণে পাদটীকায় মূল উৎস থেকে নেওয়া বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করেছি। কম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যসমূহও টীকায় পরিবেশন করেছি।
রুমিকে জানার প্রধান ও গৌণ উৎসগুলো, যেগুলোয় ভর দিয়ে দাঁড় করিয়েছি নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, সেগুলোর তালিকা ‘রুমিসূত্র: প্রাইমারি লিটারেচার’ ও ‘রুমিসূত্র: সেকেন্ডারি লিটারেচার’ নামে ভাষণের শেষদিকে উল্লেখ করেছি। ‘কম্পারেটিভ লিটারেচার’ নামে আরেকটি তালিকা দিয়েছি, যেগুলো রুমিসাহিত্যের তুলনামূলক মূল্যায়নে সাহায্য করেছে। মাসনভি ও দিওয়ানের ৫০টি কাব্যগল্প ও গজল বাছাই করেছিলাম, ভেবেছিলাম ‘নির্বাচিত রুমি’ শিরোনামে যুক্ত করবো, কিন্তু দেখা গেলো— পৃষ্ঠা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকশো। তাই বাদ দেয়া হলো।
রুমির জীবন ও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর টাইমলাইন বইয়ের শেষে ‘রুমিপঞ্জী’ নামে যুক্ত করেছি। ‘মৌলভি তরিকাপঞ্জী’ নামে আরেকটি টাইমলাইন দিয়েছি, যেখানে রুমির আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী বা পীরবংশের বর্ণনা আছে। এ দুটি পঞ্জীতে আগে চোখ বুলিয়ে নিলে ভাষণটি বুঝতে সুবিধা হবে।
কয়েকজন অধ্যাপক ভাষণটিকে ‘পিএইচডি থিসিস’ হিশেবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, বইটি একাই তিনটি পিএইচডি পেতে পারে। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। ভুঁইফোঁড় সন্দর্ভওয়ালাদের কাতারে নামিয়ে সৃষ্টিকর্মটিকে অপমান করা ঠিক হবে না।
‘বিশ্বসাহিত্য ভাষণ’ একটি লম্বা সিরিজ। এর কিছু খণ্ডের সংক্ষিপ্ত ও পপুলার সংস্করণ ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছিলো, পেয়েছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা। কিন্তু টীকা ও ভাষণদৈর্ঘ্য ফেসবুকের উপযোগী না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ স্কলারলি সংস্করণের সাথে পাঠকদের পরিচয় করানো সম্ভব হয় নি। আমি আনন্দিত যে, জালালুদ্দিন রুমি খণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘বিশ্বসাহিত্য ভাষণ’-এর পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা শুরু হয়েছে। আশা করি সাধারণ পাঠক, ছাত্র/ছাত্রী, ও শিক্ষকরা ভাষণটি থেকে উপকৃত হবেন। সাহিত্যকে দেখতে শিখবেন নতুন দৃষ্টিতে।”
“এ বইটি লিখতে চাই নি, কিন্তু লিখতে হয়েছে। যেতে হয়েছে বিপুল শ্রমের ভেতর দিয়ে। যোগাড় করতে হয়েছে শতো শতো বই। পড়তে হয়েছে নানা আজেবাজে পৃষ্ঠা। কাজটা উপভোগ করি নি। বিরক্ত হয়েছি ঢের, কিন্তু সহ্য করেছি, কারণ বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দারিদ্র্য এভারেস্টের চেয়ে উঁচু। বাংলা ভাষায় রুমিসাহিত্যের নির্মোহ বিশ্লেষণ নেই বললেই চলে। যা আছে, তা গরিব ভক্তমণ্ডলীর হামদ-নাত, স্তুতিকিতাব, ও সেজদা। কিচ্ছারুমির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে আসল রুমি। তৈরি হয়েছে রূপকথার জঙ্গল। ঘটানো হয়েছে সুপারহিউম্যানাইজেশন। পছন্দের লোককে অতিমানব ও অপছন্দের লোককে অতিশয়তান করা মানুষজাতির পুরাতন রোগ। রুমিসাহিত্য এ রোগের প্রসিদ্ধ শিকার। বর্ণরোগী যেমন বস্তুর আসল রঙ দেখতে পায় না, রুমিভক্তরাও তেমনি রুমির মানব রূপ স্বীকার করতে চায় না। ‘নবী রুমি’-র খোলস ভেঙে ‘মানুষ রুমী’ বের করে আনাই বইটির বড় লক্ষ্য। রুমিকে ঘিরে একটি অক্ষ তৈরি হয়েছে। অ্যাক্সিস অভ সুফি লিটারেচার। ফলে অনিবার্যভাবে, ভাষণে ফরিদুদ্দিন আত্তার, সানাই গজনভী, শামস তাবরিজি, হাফিজ, সাদি, হাল্লাজ, বায়েজিদ, তাঁদের প্রসঙ্গ এসেছে। সুফিবাদের উৎস ও প্রাচীন ধোঁয়াশাবাদের সাথে এর সম্পর্ক, অন্য ধর্মগুলোর সাথে কোলাকুলি, এ বিষয়গুলোও এসেছে। ‘অশালীন’ জিনিসপত্রও আলোচনা করতে হয়েছে, এড়ানো যায় নি (যেমন— সুফিদের যৌনজীবন ও রুমিযুগের সমকামিতা)। ভাষণটির বহু বাক্য পাঠককে বিব্রত করবে। অনেকে হোঁচট খাবে, ভাববে, মনে হয় মহিউদ্দিন মোহাম্মদ বানিয়ে বলেছেন। এ কারণে পাদটীকায় মূল উৎস থেকে নেওয়া বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করেছি। কম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যসমূহও টীকায় পরিবেশন করেছি। রুমিকে জানার প্রধান ও গৌণ উৎসগুলো, যেগুলোয় ভর দিয়ে দাঁড় করিয়েছি নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, সেগুলোর তালিকা ‘রুমিসূত্র: প্রাইমারি লিটারেচার’ ও ‘রুমিসূত্র: সেকেন্ডারি লিটারেচার’ নামে ভাষণের শেষদিকে উল্লেখ করেছি। ‘কম্পারেটিভ লিটারেচার’ নামে আরেকটি তালিকা দিয়েছি, যেগুলো রুমিসাহিত্যের তুলনামূলক মূল্যায়নে সাহায্য করেছে। মাসনভি ও দিওয়ানের ৫০টি কাব্যগল্প ও গজল বাছাই করেছিলাম, ভেবেছিলাম ‘নির্বাচিত রুমি’ শিরোনামে যুক্ত করবো, কিন্তু দেখা গেলো— পৃষ্ঠা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকশো। তাই বাদ দেয়া হলো। রুমির জীবন ও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর টাইমলাইন বইয়ের শেষে ‘রুমিপঞ্জী’ নামে যুক্ত করেছি। ‘মৌলভি তরিকাপঞ্জী’ নামে আরেকটি টাইমলাইন দিয়েছি, যেখানে রুমির আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী বা পীরবংশের বর্ণনা আছে। এ দুটি পঞ্জীতে আগে চোখ বুলিয়ে নিলে ভাষণটি বুঝতে সুবিধা হবে। কয়েকজন অধ্যাপক ভাষণটিকে ‘পিএইচডি থিসিস’ হিশেবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, বইটি একাই তিনটি পিএইচডি পেতে পারে। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। ভুঁইফোঁড় সন্দর্ভওয়ালাদের কাতারে নামিয়ে সৃষ্টিকর্মটিকে অপমান করা ঠিক হবে না। ‘বিশ্বসাহিত্য ভাষণ’ একটি লম্বা সিরিজ। এর কিছু খণ্ডের সংক্ষিপ্ত ও পপুলার সংস্করণ ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছিলো, পেয়েছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা। কিন্তু টীকা ও ভাষণদৈর্ঘ্য ফেসবুকের উপযোগী না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ স্কলারলি সংস্করণের সাথে পাঠকদের পরিচয় করানো সম্ভব হয় নি। আমি আনন্দিত যে, জালালুদ্দিন রুমি খণ্ডের মধ্য দিয়ে ‘বিশ্বসাহিত্য ভাষণ’-এর পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা শুরু হয়েছে। আশা করি সাধারণ পাঠক, ছাত্র/ছাত্রী, ও শিক্ষকরা ভাষণটি থেকে উপকৃত হবেন। সাহিত্যকে দেখতে শিখবেন নতুন দৃষ্টিতে।”
Writer |
|
Publisher |
|
ISBN |
9789849988724 |
Language |
Bengali / বাংলা |
Country |
Bangladesh |
Format |
Hardcover |
Edition |
1 St |
First Published |
February 2025 |
Pages |
160 |