শেখ আবদুর রহিম
শেখ আবদুর রহিম। ১৮৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত মুহম্মদপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মুন্সি শেখ গোলাম এহিয়া ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শৈশবে মাতৃবিয়োগ ঘটলে মাতুল মুন্সি গোলাম কিবরিয়ার মাধ্যমে তিনি টাকির জমিদার ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রাধামাধব বসুর পরিবারে আশ্রয় লাভ করেন এবং সেখানেই লালিতপালিত হন। টাকির স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করার পর তিনি কলকাতার সিটি স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন, কিন্তু বসন্তরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে (১৮৭৫)। তিনি আশ্রয়দাতা জমিদারের সান্নিধ্যে থেকে বারো-তেরো বছর শিক্ষানবিসি করেন। পরে রাধামাধবের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাহিত্য ও সংবাদপত্রের জগতে প্রবেশ করেন। আবদুর রহিম এবং মৌলবি মেয়রাজউদ্দীন আহমদ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দীন আহমদ মাশহাদী ও মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদএর মিলিত প্রচেষ্টায় দুখন্ডে ইসলামের সারসংগ্রহ এসলাম তত্ত্ব (১৮৮৮ ও ১৮৮৯) প্রকাশিত হয়। আবদুর রহিম বহু সাময়িক পত্রের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন, যেমন: সুধাকর (১৮৮৯), ইসলাম প্রচারক (১৮৯১), মিহির (১৮৯২), মিহির ও সুধাকর (১৮৯৪), হাফেজ (১৮৯৭), মোসলেম ভারত (১৯০০), মোসলেম হিতৈষী (১৯১১) ও ইসলাম-দর্শন (১৯১৬)। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও নানাভাবে যুক্ত ছিলেন, যেমন: কলকাতা মহামেডান ইউনিয়ন (১৯০৩), বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা সেন্ট্রাল টেক্সটবুক কমিটি, চবিবশ পরগনা ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন কমিটি প্রভৃতি। আবদুর রহিমের লক্ষ্য ছিল ইসলামি ভাবধারায় পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজে নবজাগরণ সৃষ্টি ও বাংলা ভাষার উন্নয়ন করা। ‘বঙ্গভাষা ও মুসলমান সমাজ’ প্রবন্ধে তাঁর এই মনোভাব, বিশেষত বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলার মুসলমান সমাজে মাতৃভাষাপ্রীতি, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ও জাতীয় সাহিত্য রচনা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে মুসলমানদের মধ্যে চেতনা সৃষ্টি করা তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়এর প্রবেশিকা পরীক্ষার বাংলা ভাষার একজন পরীক্ষক ছিলেন। আবদুর রহিম ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলির মধ্যে উলেখযোগ্য কয়েকটি হলো: হজরত মহম্মদের জীবনচরিত ও ধর্মনীতি (১৮৮৮), ইসলামতত্ত্ব (১৮৯৬), নামাজতত্ত্ব (১৮৯৮), হজবিধি (১৯০৩), ইসলামের ইতিবৃত্ত (২খন্ড, ১৯১০), নামাজ শিক্ষা (১৯১৭), খোতবা (১৯৩২) প্রভৃতি। এছাড়া তাঁর রোমান্সমূলক দুটি গ্রন্থ হলো আলহামরা (১৮৯১) ও প্রণয়যাত্রী (১৮৯২)। ১৯৩১ সালের ১৪ জুলাই স্বগ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন