অমল বড়ুয়া
অমল বড়ুয়া — এক মননের সংবেদনশীল স্রষ্টা, যিনি শব্দকে কেবল প্রকাশের উপায় নয়, আত্মবীক্ষণের দর্পণ হিসেবে ব্যবহার করেন। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার আধারমানিক গ্রামের জমিদারবাড়ীখ্যাত জনুলোথক পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা সুদত্ত বড়ুয়া ও মাতা ছবি বড়ুয়ার স্নেহে ও অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা এই চিন্তাশীল মানুষটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তাঁর লেখালেখি যেন বোধ ও প্রজ্ঞার এক অবিরাম যাত্রা। অমল বড়ুয়ার রচনায় প্রতিফলিত হয় বৌদ্ধ দর্শনের আলোকধারা, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের গভীর বিশ্লেষণ, সমাজ-সংস্কৃতির বহুমাত্রিক রূপ এবং মানুষের অস্তিত্বচেতনার সূক্ষ্ম অনুসন্ধান। তাঁর লেখায় তথ্য ও তত্ত্ব যেমন নির্ভুলভাবে বিন্যস্ত, তেমনি অনুভূতির স্তরেও জাগে নান্দনিকতার স্বচ্ছ দীপ্তি। তিনি বিশ্বাস করেন—লিখন এক শিল্প, এক ধ্যান, যেখানে চিন্তা পরিণত হয় সৌন্দর্যে, আর সৌন্দর্য রূপ নেয় প্রজ্ঞায়। অমল বড়ুয়া সময়কে দেখেন গভীর দৃষ্টিতে। তিনি অতীতের আলোকে বর্তমানকে বোঝেন, আর বর্তমানের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। তাঁর কলমে ইতিহাস ও সমকাল মিলিত হয় এক মানবিক বোধে, যেখানে শব্দ হয়ে ওঠে সময়ের সাক্ষী এবং চিন্তা হয়ে ওঠে সত্যের দিশারী। তাঁর লেখায় আছে এক নীরব সুর—যা পাঠকের মনে জাগায় মননের উজ্জ্বল আলো, তৈরি করে আত্মচিন্তার প্রশান্ত পরিসর। তাঁর এই নিরন্তর সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চা পেয়েছে যথাযোগ্য স্বীকৃতি। ২০১৮ সালে সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন বুড্ডিস্ট স্টাডিজ, বাংলাদেশ তাঁকে প্রাজ্ঞ লেখক ও গবেষক হিসেবে ‘এপ্রিসিয়েশন অব মেরিট’ সম্মাননায় ভূষিত করে। ২০২২ সালে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সমকালীন আধ্যান’ তাঁকে এনে দেয় অক্ষরবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার। ২০২৫ সালে তিনি লাভ করেন বিশুদ্ধানন্দ-সুগতানন্দ স্বর্ণপদক এবং একই বছর অর্জন করেন ‘প্রজ্ঞাপ্রতিম’ উপাধি—যা তাঁর সাহিত্য ও মননচর্চার উজ্জ্বল স্বীকৃতি। অমল বড়ুয়া বর্তমানে অবিরাম লিখে চলেছেন—গভীর চিন্তা ও সৃজনশীলতার মিলনে নির্মাণ করছেন এমন সব রচনা, যা সময়ের সীমানা অতিক্রম করে মানবচেতনার অনন্ত আলোয় অবস্থান করবে। তাঁর অপ্রকাশিত লেখাগুলো আজও অপেক্ষমাণ—পাঠকের হৃদয়ে প্রজ্ঞা ও সৌন্দর্যের নবতর অভিজ্ঞতা সঞ্চার করার প্রত্যাশায়।